স্বদেশ ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক গণতন্ত্রী পার্টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টির দুই পক্ষের ১০ প্রার্থী অংশ নিতে পারবেন। তাদের প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা ‘কবুতর’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।
দলের সভাপতি দাবি করা আরশ আলী মনোনীত সাত প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করা আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
নির্বাচনে আরশ আলী মনোনীত সাত প্রার্থী হলেন- ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক (কিশোরগঞ্জ-১), মো. আশরাফ আলী (কিশোরগঞ্জ-২), দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (কিশোরগঞ্জ-৩), মো. মোজাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া (নীলফামারী-৩), মিহির রঞ্জন দাশ (সুনামগঞ্জ-২), মো. খায়রুল আলম (পাবনা-৩) ও মো. মতিউর রহমান (খুলনা-২)।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের করা একই আবেদনের পক্ষ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে আবেদন করেন তিনজন, যারা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি দাবি করা শাহাদাত হোসেন মনোনীত প্রার্থী।
শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। তাদের (তিন প্রার্থী) প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেন।
দলটির অপর অংশ মনোনীত তিন প্রার্থী হলেন- শাহাদাত হোসেন (ঢাকা-৮), মঞ্জুরুল ইসলাম (বগুড়া-৪) ও হাফিজুর রহমান মিন্টু (ঢাকা-৫)।
ইসি সূত্র জানায়, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি কমিটি নির্বাচন কমিশনে আলাদাভাবে দাখিল করেন। উভয় অংশের কাগজপত্রে ঘাটতি ছিল। এজন্য তাদের বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছিল। তারা আবার দুই ভাগে কাগজপত্র জমা দেয়। পরে ইসি দলের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
১২ ডিসেম্বর ইসির এক চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথকভাবে কমিটির নাম দাখিল করেছে। এগুলো নির্বাচন কমিশন নামঞ্জুর করে। সুতরাং গণতন্ত্রী পার্টি নামের রাজনৈতিক দলের অনুমোদিত কোনো কমিটি বিদ্যমান নেই। এ অবস্থায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টির কোনো পদধারীর দাখিল করা প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গণতন্ত্রী পার্টির ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে গণতন্ত্রী পার্টির পদধারী আগ্রহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলসহ ১২ ডিসেম্বর ইসির গৃহীত পৃথক সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে নির্দেশনা চেয়ে আরশ আলী মনোনীত ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিকসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশে দলটির নিবন্ধন বাতিল ও আগ্রহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলে ইসির সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ইসি আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন। এ অবস্থায় গণতন্ত্রী পার্টির তিন প্রার্থী ইসির আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে আবেদন করেন।
আদালতে ইসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আশফাকুর রহমান। ভূপেন্দ্র ভৌমিকসহ রিট আবেদনকারী সাতজনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফুয়াদ হোসেন। অপর তিনজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবীর আকন।
পরে ইসির আইনজীবী আশফাকুর রহমান বলেন, গণতন্ত্রী পার্টির নিবন্ধন বহাল এবং রিট আবেদনকারী সাতজনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আবেদন করে। তারা দলটির সভাপতি দাবি করা আরশ আলী মনোনীত প্রার্থী। সাতজনের প্রার্থিতার বিষয়ে চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ না দিয়ে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। এর ফলে তাদের প্রার্থিতা বহাল থাকল। আর যে তিনজন পক্ষভুক্ত হয়ে নির্বাচনের অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন, তারা দলটির সভাপতি দাবি করা শাহাদাত হোসেনের মনোনীত প্রার্থী। তাদের প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে দুই পক্ষের ১০ প্রার্থী ‘কবুতর’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।